২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেটে আমজনতার জন্য সবথেকে বড় ঘোষণা হল ব্যাঙ্ক গ্যারেন্টি বীমা পাঁচগুণ করা। এছাড়াও রয়েছে মধ্যবিত্তের জন্য আয় কর প্রদানে স্বস্তি। তবে আবার এরই মাঝে বেসরকারিকরণের মত রয়েছে খারাপ খবরও। শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আড়াই ঘণ্টা দীর্ঘায়িত বক্তব্যের মাধ্যমে পেশ করেন এবারের ইউনিয়ন বাজেট। এই বাজেটে দেশের কৃষকদের জন্য নানান প্রকল্প, রেলের পরিকাঠামো সম্পর্কিত নানান প্রস্তাব, শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও জোরালো প্রস্তাব, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ও স্বচ্ছ ভারত মিশনের মত নানান প্রকল্পে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়।
কিন্তু এই ব্যাঙ্ক গ্যারেন্টি বীমা আসলে কি?
ইউনিয়ন বাজেট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ১ লক্ষ টাকা থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হলো। DICGC অথার্ৎ ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারেন্টি কর্পোরেশনের তরফে জারি হলো এই নতুন নিয়ম। এই নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকদের ৫ লক্ষ টাকার সুরক্ষার গ্যারেন্টি দেওয়া হবে৷ এই নিয়ম দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কের সমস্ত ব্রাঞ্চে লাগু হয়ে যাবে।
এতে যদি কোনো ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গ্রাহকরা Principal and Interest দুটি মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকা পাবেন। যদি ৫ লক্ষ টাকার বেশিও ব্যাঙ্কে থাকে তাতেও সুরক্ষিত মনে করা হবে ৫ লক্ষ টাকা৷ একই ব্যাঙ্কে আপনার একাধিক অ্যাকাউন্টে একাধিক ফিক্সড ডিপোজিট থাকলেও ৫ লক্ষ টাকা সুরক্ষিত মনে করে দেওয়া হবে। কিন্তু এতে খুশির খবরটা কোথায়? অবশ্যই খুশির খবর রয়েছে। এর জন্য আপনাকে পিছনে যেতে হবে।
২০১৭ সালের আরবিআইয়ের নির্দেশিকা রয়েছে, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করা হলে, আবেদনের দু’মাসের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিবে ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ও ক্রেডিট গ্যারেন্টি কর্পোরেশন (ডিআইসিজিসি)। অর্থাৎ সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী এর আগে পর্যন্ত যত টাকায় ব্যাঙ্কে সঞ্চিত থাক না কেন গ্যারেন্টি হিসাবে পাবেন মাত্র ১ লক্ষ টাকা। সেই নিয়মের এবার পরিবর্তন হলো চলতি বাজেটে। সেই গ্যারেন্টির টাকা ৫ গুণ বাড়িয়ে করা হলো ৫ লক্ষ টাকা।
তবে তার থেকে বেশি টাকা সঞ্চিত থাকলেও সেই টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াও চলবে। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আরবিআই লিকুইডেটর নিয়োগ করে। তারা ব্যাঙ্কের সম্পদের মূল্যায়ন করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। এমনকি দেশের প্রতিটি ব্যাঙ্কের মোট মূলধনের একটি অংশ আরবিআইয়ের কাছে জমা থাকে। সেখান থেকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আরবিআইয়ের কাছে থাকা আমানতের বীমাও করা থাকে, যেখান থেকেই ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
বর্তমানে দেশের আর্থিক মন্দা অবস্থায় এবং পিএমসি ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির মুহূর্তে ২০১৭ সালের নির্দেশিকা ২০১৯ সালে স্ট্যাম্প মেরে গ্রাহকদের জানানোর ক্ষেত্রে উদ্বেগে পড়েন লক্ষ লক্ষ আমানতকারী।
সে ক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে গ্রাহক নিরাপত্তা বর্তমানে খুবই আঁটোসাঁটো। সমীক্ষা বলছে, গত ৪০ বছরে ব্যাঙ্কে টাকা রেখে কাউকে খোয়াতে হয়নি। কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মতো ব্যাঙ্কে তালা ঝুললেও গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে এই সুরক্ষাকবচ থাকে কিনা, তা নিয়েই সংশয়।