এখনও পর্যন্ত ল্যান্ডার বিক্রমের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব না হলেও ভারতের চন্দ্রযান-২ ৯৫% সফল আগেই ঘোষণা করা হয়েছে ইসরোর তরফ থেকে। চন্দ্রযান ২ এর যে উদ্দেশ্য সেই উদ্দেশ্যের ৯৫% সফলতার জন্য ইতিমধ্যেই নাসা থেকে ভারতকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। আগেই আমরা এই চন্দ্র অভিযানের সাথে এক বাঙালি হুগলির গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েতের শিবপুর গ্রামের চন্দ্রকান্ত কুমারের জেনেছি। কিন্তু জানেন কি এই চন্দ্র অভিযানের সাথে যুক্ত রয়েছেন আরো এক বাঙালি বিজ্ঞানী, যাঁর বাড়ি বীরভূমে। আর একথা জানতে পেরে বাঙালি হিসাবে আমরা আরও গর্বিত।
চন্দ্রযান ২ এর সাথে যুক্ত আরও এক বাঙালি হলেন বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার অন্তর্গত দক্ষিণ গ্রামের বিজ্ঞানী বিজয় কুমার দাই। অত্যন্ত মেধাবী বিজয় কুমার বীরভূমের দক্ষিণ গ্রামে এক দরিদ্র চাষি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। বাবা নারায়ন চন্দ্র দাই একজন চাষী, বাড়িতে রয়েছে ছোট ভাই বাপি দাইও এমএ, বিএড করার পর চাষের কাজেই নিযুক্ত, যদিও তাঁর বিগত এসএসসি প্যানেলে নাম রয়েছে।
বিজয় কুমার গ্রামেরই প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্কুলের শিক্ষকরা তাঁর মেধার পরিধি উপলব্ধি করতে পারেন। যখন তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন তখন তাঁর মেধার জন্য তাঁর হাতে নিচু ক্লাসের দায়িত্বও দিয়ে দিতেন স্কুলের শিক্ষকরা (যখন শিক্ষক কম আসতেন)। তিনি অষ্টম শ্রেণীতেই জাতীয় স্কলারশিপ অর্জন করেছিলেন।
তিনি মাধ্যমিকে অংকতে পেয়েছিলেন ১০০% নাম্বার, যা স্কুলের ইতিহাসে প্রথম। গ্রামের স্কুল পড়াশোনার পর তিনি যান বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনার জন্য। তারপর কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে উত্তীর্ণ, গেট পরীক্ষা দিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ECE থেকে এমটেক করতে করতে ইসরোতে একজন বিজ্ঞানী হিসাবে ২০০৭ সালে নিযুক্ত হন। একজন বিজ্ঞানী হিসাবে গবেষণা চালাতে চালাতে তিনি এমটেক সম্পূর্ণ করেন। তিনি মিশন অপারেশন এবং বিশ্লেষণ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত।
তিনি প্রথম থেকেই মঙ্গল অরবিটার মিশন অভিযানে যুক্ত ছিলেন। আর তারপরেই তিনি এই চন্দ্রযান ২ এর অপারেশন দলের দায়িত্ব পান। তাঁর কাজ মহাকাশযানটির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা। গ্রাউন্ড স্টেশনের সাথে সমন্বয় স্থাপন করে মহাকাশযানের কমান্ড পাঠানো। কোনো প্রকার গলদ দেখা দিলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বিজয় কুমারের রয়েছেন আরও এক দাদা, বিনয় কুমার দাই, যিনি একজন গৌরবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিজয় কুমারের ভাই বাপি দাই জানিয়েছেন, “আমরা খুব দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছি। আজ আমার দাদা শুধু আমাদের গর্ব নয়, গোটা জেলা, গোটা রাজ্য এবং দেশের গর্ব।”