খাবার চিনি মনে করে ভুল বুঝবেন না। কথা হচ্ছে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ে। ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ, তাতে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। যুক্তরাষ্টের ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, রক্তে চিনির বাড়তি পরিমাণ ধ্বংস করছে চোখের আরাম এবং সেটা করছে অজান্তে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গোপনে শরীরের সর্বনাশ ডেকে আনছে রক্তের শর্করা। শরীরের সব প্রত্যঙ্গের পাশাপাশি চোখেরও। কেউ কেউ অবশ্য টাইপ ২ ডায়াবেটিস, অর্থাৎ পরিণত বয়সে যে ডায়াবেটিস হয়, তা নিয়ে ১৭–১৮ বছর কাটানোর পরও তেমন কোনো জটিলতায় ভোগেন না।
জিনের কারণে অনেকের চোখ, কিডনি মোটামুটি ঠিকঠাক থাকে। বাকিদের ক্ষেত্রে মোটামুটি বছর পাঁচেক পর চোখের নার্ভ বা রেটিনা খারাপ হয়ে দৃষ্টিশক্তি খারাপ হতে শুরু করে, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ইনসুলিন নির্ভর হলে সে আশঙ্কা আরো বাড়ে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে (বাচ্চাদের যে ডায়াবেটিস হয়) ভুগলে, ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ৯৮ শতাংশ বাচ্চা এতে ভুগতে শুরু করে।
সুগার বশে থাকলে রোগ ঠেকিয়ে রাখা যায় বহু দিন। তার জটিলতাও কম থাকে। গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন বা এইচবিএ১সি সাত–এর নীচে রাখতে পারলে খুব ভালো। সাত-আটের মধ্যে থাকলে এতটা সুবিধা কিন্তু নেই। আট-নয় হলে তো চোখের অবস্থা তাড়াতাড়ি জটিল হয়। ৯ এর বেশি হলে তো কথাই নেই! সঙ্গে হাইপ্রেশার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে বিপদ বাড়ে।
ডায়াবেটিক আক্রান্ত নারীরা অন্তঃসত্ত্বা হলে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আবার তার যদি আগে থেকেই রোগ থেকে থাকে, তাহলে ওই সময় বাড়ে তার প্রকোপ। ওবেসিটি থাকলেও বিরাট ঝামেলা।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে প্রতি বছর চোখের রেটিনা, কিডনি ও নার্ভ পরীক্ষা করে দেখতে হয়। টাইপ ২ হলে শুরু থেকেই প্রতি বছর পরীক্ষা করা দরকার।
রেটিনায় গোলমাল হলে চিকিৎসকরা লেসার দিয়ে চিকিৎসা করেন। কখনো কিছু ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে রোগ খুব ভালো ভাবে আয়ত্তে থাকে।
ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, হাই কোলেস্টেরল ও মেদবাহুল্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এ নিয়ে আর চিন্তার তেমন কিছু থাকে না। তাই নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি, ওষুধ খান এবং নিয়মিত পরীক্ষায় নিজেকে সুস্থ রাখুন।